কলাপাড়ায় স্থানীয় সিন্ডিকেটের ফাঁদে অসহায় পুলিশ! Latest Update News of Bangladesh

শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩
সংবাদ শিরোনাম:




কলাপাড়ায় স্থানীয় সিন্ডিকেটের ফাঁদে অসহায় পুলিশ!

কলাপাড়ায় স্থানীয় সিন্ডিকেটের ফাঁদে অসহায় পুলিশ!

কলাপাড়া স্থানীয় সিন্ডিকেটের ফাঁদে অসহায় পুলিশ!




স্টাফ রিপোর্টার॥ পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলা থেকে পৃথক করে কার্যক্রম শুরু করা মহিপুর থানা জিম্মি হয়ে পড়েছে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেটের কাছে।

 

অভিযোগ রয়েছে, সেই সিন্ডিকেটের সাথে লিয়াঁজো করে না চললে তল্পিতল্পা গুছাতে হয় থানার ওসিদেরও। ২০১৬ সালের ২৮ মে থানা কার্যক্রম উদ্বোধন হওয়ার পর এই চার বছরে কমপক্ষে ৬ জন ওসিকে বদলী করা হয়েছে বিভিন্ন অজুহাতে।

 

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় ওই সিন্ডিকেটের কথামত স্থানীয় পুলিশ কাজ না করলে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়। নিরিহ বাসিন্দাদের চাপের মুখে ফেলে দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। সিন্ডিকেট সৃষ্ট স্থানীয় প্রভাবের কারনে শেষে বদলী করতে হয় থানার ওসিদের।

জানা গেছে, কুয়াকাটা পৌরসভা এবং মহিপুর, লতাচাপলি, ধুলাসার, ডালবুগঞ্জ এই চারটি ইউনিয়ন নিয়ে মহিপুর থানা গঠিত। থানা এলাকার অধিকাংশ সম্পত্তির মালিক রাখাইন সম্প্রদায়। শিক্ষায় এবং মনোভাবে পিছিয়ে থাকা এই সম্প্রদায়কে বিভিন্নভাবে ওই এলাকার বাঙালী বাসিন্দারা প্রভাবিত করে থাকেন।

 

 

মূলত লতাচাপলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনছার উদ্দিন মোল্লার দৌরত্মে পুলিশ প্রশাসন বির্তকের মুখে পড়ছে। সেই সাথে স্থানীয় একটি সংগঠন তৈরী করে তার সভাপতি পদ বাগিয়ে নিয়েছেন মহিপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মুনিরুল ইসলাম।

 

 

আনছার উদ্দিন মোল্লা ও মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে পর্যটন নির্ভর ওই থানায় চাঁদাবাজী, মাসোহারা আদায়, ভূমি দস্যুতা, টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা প্রদান, মাদক সিন্ডিকেট পরিচালিত হয়ে আসছে। আইনের তোয়াক্কা না করে থানার সকল কর্মকান্ডে সিদ্ধান্ত রাখতে প্রভাব সৃষ্টি করে থাকেন তারা।

 

অভিযোগ রয়েছে, মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত মহিপুর থানা প্রেসক্লাবটি এখন মহিপুরের ‘মিনি থানা’ হিসেবে রুপান্তরীত হয়েছে। এখানে বসে ফৌজদারী অপরাধের শালিসও করে থাকেন তারা। মিলমিশ করিয়ে দেন ধর্ষণের মত ঘটনারও।

 

 

স্থানীয়রা বলছে, শিববাড়িয়া নদীর ওপর নির্মিত শেখ রাসেল সেতুর দক্ষিণ পাড়ে লতাচাপলী ইউনিয়নে এবং উত্তর পাড়ে অবস্থিত মহিপুর প্রেসক্লাব নামান্তরে মহিপুর মিনি থানায় সমন্বয় করে পুলিশের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা চালায়। তাদের সাথে আলাপ না করে পুলিশের কাছে যেকোন সাহায্য-সহায়তা চাইতে গেলে রাতের আঁধারে নির্যাতন নেমে আসে।

 

সেকারনে যেকারও দ্বারা নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর আইনের আশ্রয় নিতে হলে প্রথম অবস্থায় মহিপুর প্রেসক্লাবের, দ্বিতীয় পর্যায়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার উদ্দিন মোল্লার অনুমতির দরকার হয়।

 

 

মহিপুর থানা সূত্র জানিয়েছেন, মানুষকে থানায় আসতে নিরুৎসাহিত করে থাকেন। এতে করে সাংবিধানিক অধিকার প্রাপ্ত হননা। মূলত আইনের আশ্রয় নিতে না আসলে বা সেই সংবাদ প্রশাসন পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই যদি ধামাচাপা দেওয়া হয় তাহলে সুবিচার নিশ্চিত হয় না। থানার পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এমন অনেক ঘটনা রয়েছে নির্যাতিতদের চাপ প্রয়োগ করে থামিয়ে রাখা হয়েছে।

 

 

এটা কিন্তু স্পষ্টতই মানবাধিকার বিরোধী। ফৌজদারী বা ধর্ষণের মত ঘটনা আদালত ছাড়া আর কোথাও মিমাংশা করার এখতিয়ার নেই। কিন্তু অহরহই এমন কিছু ঘটছে।

 

এসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে গেলেই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দফতরে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করে বির্তক সৃষ্টি করা হয়।

 

 

জানা গেছে, জুন মাসের শুরুর দিকে রাখাইন পল্লীর এক কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় প্রতিবেশী এক জেলে যুবক। এ ঘটনায় আনছার উদ্দিন মোল্লা ও প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক শালিস করেছেন ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে। শেষে নির্যাতিত কিশোরী থানায় অভিযোগ করলে বেকায়দায় পড়ে ধর্ষণ চেষ্টার শিকার ওই কিশোরীর পরিবারকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি প্রদান করেন। তবে শালিসের জন্য নেওয়া ১০ হাজার টাকা ফেরত দেননি এখনো পরিবারের কাছে।

 

 

স্থানীয়রা বলছেন, দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে আনছার উদ্দিন মোল্লা ও সাংবাদিকতার পরিচয় ব্যবহার করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মনিরুল ইসলাম দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তারা জেলেদের কাছ থেকে মাসোহারা, মাদক স্পট পরিচালনা, ভূমি দস্যুতা করে থাকেন। তাছাড়া আনছার উদ্দিন মোল্লা ও মনিরুল ইসলামের মূল আয়ের উৎস শালিস করা।
এই চক্রের হাত থেকে রক্ষা পায়নি শিক্ষায় পিছিয়ে থানা মৎস শিকার নির্ভর ওই জনপদের একমাত্র শিক্ষার বাতিঘর খানাবাদ ডিগ্রী কলেজ। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সিএম সাইফুর রহমান খান বলেন, বর্তমানে ১১ শ’ এর উপরে শিক্ষার্থী রয়েছে এই কলেজে। নিজ অর্থে জমি ক্রয় করে ২০০০ সালে কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রী কলেজ স্থাপন করেন জহিরুল ইসলাম খান। চার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কলেজটি না থাকলে এতদ্ব অঞ্চলের মানুষ শিক্ষার আলো দেখতেন না।

 

 

অধ্যক্ষ বলেন, কলেজের সম্পত্তি দখলেও একটি চক্র মরিয়া হয়ে রয়েছেন। তারা চলতি বছরের মে মাসের শেষের দিকে রাতের আঁধারে ঘর তুলে কলেজের সম্পত্তি দখল করতে চেয়েছিল।

খানাবাদ ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা জহিরুল ইসলাম খান বলেন,মহিপুর থানার একটি সিন্ডিকেট ইদানিং পুলিশ-প্রশাসনকে বিষোদগার করে চলছেন। সেই চক্রটিই চালিয়ে থাকেন আনছার উদ্দিন মোল্লা সাহেব। তিনি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। সেই বলে বলিয়ান হয়ে আমার কষ্টের টাকায় প্রতিষ্ঠিত কলেজের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু দখলের চেষ্টা প্রতিহত করেছেন ওসি মুনিরুজ্জামান। তিনি না থাকলে হয়তো শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার আশ্রয়টুকু হারাতে হতো।

 

 

জহিরুল ইসলাম খান মনে করেন, ওসি সাহেবকে নিয়ে চারদিকে আনছার উদ্দিন মোল্লার লোকজনেই বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। কারন মোল্লা সাহেব তার দখলদারিত্ব চালাতে পারেননি। আমি মনে করি ওসি মনিরুজ্জামান সাহেব সৎ এবং পরোপকারী। এ যুগে সৎ মানুষের শত্রু একটু বেশি হবেই। মূলত দেশ ও জাতির কল্যানের জন্য জমি দখলদারদের প্রতিহত করে দিয়েছেন তিনি। তারপর থেকেই তাকে নিয়ে বিভিন্ন ভাবে খারাপ প্রচারণা করা হচ্ছে। আমি মনে করি, মহিপুরের মত প্রান্তিক জনপদে তিনি ন্যায় বিচারক। খেটে খাওয়া মানুষের আর্তি বোঝেন।

 

 

কুয়াকাটার ব্যবসায়ী কায়ছার জানিয়েছেন, স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গকে বিভিন্ন সময়ে মাসোহারা দিতে হতো। এর আগে অনেক ওসি এসে চাঁদা দিতে না করেছেন। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন নিজের ব্যবসা থেকে একটি পয়সাও কাউকে দিতে হয় না। ওসি মনির স্যার যা বলছেন সেটাই রেখেছেন। তিনি চাঁদাবাজী বন্ধ করেছেন।

 

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মনিরুজ্জামান যোগদানের পর বেপরোয়া কয়েকটি সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরেছে। বালুমহালা ছাড়া বালু উত্তোলন, মাদকের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে মহিপুরকে ব্যবহার বন্ধ করা, ভূমিদস্যুতা, চাঁদাবাজী বন্ধ এবং নির্যাতিত মানুষকে আইনের সেবার আওতায় আনার প্রচেষ্টা সন্তোষজনক।

 

 

এ বিষয়ে মহিপুর থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, আমি চেষ্টা করছি পুলিশের পেশাদারিত্ব অক্ষুন্ন রাখতে। এখানে আমার বাড়ি না; যে কেউ আমার আপন আবার কেউ আমার পর। মূলত অপরাধীরা আমাকে শত্রু ভাববে এটাই স্বাভাবিক। আমাকে নিয়ে বাইরে যে অপপ্রচার হচ্ছে তা মূলত উদ্দেশ্যমূলক।

 

 

যারা করছেন, তারা চান না এই এলাকায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাক। তারা শালিসি করে নিজেদের আখের গোছাতে চান। তাদের দ্বারা অনেক ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে, যা আমি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আইনের সেবায় নিয়ে এসেছি; তাই হয়তো তারা কষ্ট পেয়ে বৈরী আচরণ করছেন। সে বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমি মনে করি, আইন যা বলে সেভাবেই চলবে মহিপুরের প্রশাসনিক এলাকা।

 

 

অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত আনছার উদ্দিন মোল্লা ও মনিরুল ইসলামকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলে তারা রিসিভ না করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন বিধায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD